আগামী ১৭ আগস্ট থেকেই এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। একদল শিক্ষার্থী এ পরীক্ষা পেছানোর দাবি করলেও তার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, এ বছর দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৬৫৮টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৬৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালে সব বোর্ড মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত তিন বছর যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রমান্বয়ে আমরা এ সময়সূচি-বিপর্যয় পর্যায়ক্রমে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সেই ধারাবাহিকতায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৩ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ২০২৩ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি (সিলেবাস) অনুযায়ী পূর্ণনম্বর ও পূর্ণসময়ে হবে।
দীপু মনি জানান, এবার দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ২৬ হাজার ২৫১ জন এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৩ জন। মোট কেন্দ্র এক হাজার ৫৩৫ এবং মোট প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার ৬৪৭টি।
এদিকে, মাদরাসা বোর্ডের অধীন আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৯৮ হাজার ৩১ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৫৩ হাজার ৬৩ জন এবং ছাত্রী ৪৪ হাজার ৯৬৮ জন। মোট কেন্দ্র ৪৪৯টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৬৮৮টি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স পরীক্ষায় অংশ নেবেন এক লাখ ৫২ হাজার ৭১৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৯ হাজার ৫৭৩ জন এবং ছাত্রী ৪৩ হাজার ১৪৪ জন। মোট কেন্দ্র ৬৭৪টি এবং মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক হাজার ৮৩৪টি।
ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রমুখ।
এদিকে, এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেন পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি থেকে মিছিল বের করেন কিছু পরীক্ষার্থী। এ সময় তাদের হাতে দেখা যায়- পরীক্ষা দুইমাস পেছানো, ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার দাবি এবং সোমবার পুলিশি হামলার প্রতিবাদ সংবলিত প্ল্যাকার্ড।
তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ থানার সামনে আসার পরই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হন বলেও দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে ছয়জনকে ধরে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে তাদের আটক দেখানো হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সূচি গত ৮ জুন প্রকাশ করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা সূচিতে জানানো হয়, পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহু নির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় অংশের পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।
এতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
এইচএসসির আইসিটিতে নম্বর কমলো, প্রশ্নের অপশন বাড়লো: শিক্ষার্থীদের কাছে কঠিন বিষয় হওয়ায় চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় আইসিটি বিষয়ে নম্বর কমানো ও প্রশ্নের অপশন বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা সহজ করতে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুযায়ী তিনটি বিষয় বাদে সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, একটি বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হবে না। সেটি হলো- আইসিটি। আইসিটিতে ২৫ নম্বর থাকবে ব্যবহারিকে, লিখিত পরীক্ষা ৭৫ নম্বরের পরিবর্তে ৫০ নম্বরে পরীক্ষা হবে। সেই ৫০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর হবে এমসিকিউ। অর্থাৎ ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে তারা ২০টির উত্তর দেবে। কাজেই তাদের অপশন বাড়ছে। আর এমসিকিউ অর্থাৎ বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে ৮টি প্রশ্ন থাকে, তার মধ্যে ৫টির উত্তর দিতে হয়। এবার ৮টি প্রশ্নের জায়গায় তাদের ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কাজেই তাদের অপশন অনেক বেড়ে গেল। অনেক সহজ হবে তাদের জন্য।
মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি আইসিটি বইটির আগামী বছর ব্যাপক রিভিশন হবে। আমরা মনে করছি বিশেষ করে মানবিক ও ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থীদের কারো কারো জন্য হয়তো কঠিন হতে পারে। কাজেই এ বছর তাদের পরীক্ষা সহজ করার জন্য পূর্ণ নম্বরে নিচ্ছি না।
তিনি বলেন, সব শিক্ষা বোর্ড থেকে সব পরীক্ষার্থীকে অবহিত করা হবে। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সব পরীক্ষার্থীকে জানিয়ে দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, আইসিটি পরীক্ষা নিয়ে তাদের দাবি আছে। আমরা তো আইসিটি পরীক্ষাটা সহজ করলাম। আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা বলছে পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুত না, তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে। তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তারিখ থেকেই পরীক্ষা শুরু হবে।