চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অপারেশন ঈগল হান্টের নামে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে স্বামী আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু মরিচকে হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে নিহতের স্ত্রী মামলার আবেদন করেছেন। দীর্ঘ আট বছর পর সোমবার সন্ধ্যায় নিহতের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের (৩০) পক্ষে শিবগঞ্জ থানায় মামলাটি দাখিল করেন তার ভাই সানাউল্লাহ। মামলার আবেদনে প্রধান আসামি করা হয়েছে অপারেশন ঈগল হান্টের আভিযানিক দলের উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির আলম চৌধুরীকে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি একেএম শহিদুল হক, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল আলম, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। 

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল গভীর রাতে পুলিশ-র‌্যাব, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াত টিমের যৌথবাহিনীর দল আবুর বাড়ি ঘেরাও করে গোলাগুলি শুরু করে। এ সময় ঘুম ভেঙে বাড়ি থেকে বের হবার চেষ্টা করলেও বাড়ির বাইরে থেকে মূল ফটক বন্ধ থাকায় আবু, তার স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। এ সময় স্বামী ও ছোট তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়লে জানালা দিয়ে যুদ্ধের মত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পারায় আবু স্বপরিবারে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় পুরো বাড়ি ভুতরে অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরদিন একই কায়দায় আবারো গোলাগুলি শুরু হওয়ায় টানা তিনদিন পুরো পরিবারটি না খেয়ে ঘরের এককোনে পড়ে ছিলেন। তৃতীয়দিন গোলাগুলির একপর্যায়ে বাড়িতে প্রধান আসামির নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করে স্বামী আবুকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে তার মরদেহ জঙ্গি হিসেবে দাবি করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে নিহতের স্ত্রী সুমাইয়াকে আটক করে নিয়ে যায় তারা। আহত সুমাইয়াকে দেড় মাস চিকিৎসা শেষে জেলে ও দুই বছর পর জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এর দুদিন পর ২৭ এপ্রিল বিকালে দুটি হেলিকপ্টারযোগে তিনটি বস্তাবন্দি মরদেহ আবুর বাড়ি নিয়ে গিয়ে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মরদেহ তিনটি বিস্ফোরিত হলে সেগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

মামলার আবেদনকারী সুমাইয়ার ভাই সানাউল্লাহ দাবি করেন, তার ভগ্নিপতি বিএনপির সক্রিয় সমর্থক হওয়ায় তাকে হত্যার পর মরদেহগুলোতে আবারো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মরদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তার দাবি দুদিন আগেই তার ভগ্নিপতিসহ অন্যদের হত্যা করা হলেও জঙ্গি নাটক সাজিয়ে দুগর্ন্ধ যুক্ত মরদেহগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। শুধু তাই নয়, তার অন্ত:স্বত্ত¡া বোনকে পায়ে গুলি করে আহত অবস্থায় এবং আমাকে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে। গুম হওয়া বিএনপি কর্মী রেজাউল ও নিহত মিজানুরের ভাই সেতাউর রহমান জানান, শুধু মাত্র বিএনপি করার অপরাধে তার দুই ভাইসহ ফুটপাতের মসলা ব্যবসায়ী আবুকে হত্যা ও গুম করে জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তার দাবি- রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকায় এ মামলাটি করতে বিলম্ব হয়েছে। 

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওবায়েদ পাঠান জানান, শুধুমাত্র বিএনপি রাজপথে আওয়ামী লীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তাদের নেতাকর্মী সব থেকে বেশি গুম-খুন হয়েছে। আর জঙ্গি নাটকে বেশি মারা গেছে- এ জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য এ মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান, যেহেতু দীর্ঘদিন আগের এ ঘটনা ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।