শিরোনাম
  • ফের যে আসন থেকে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইসরায়েল কে এই নতুন মেসি-ইয়ামাল? ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে যা বললেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে যে নতুন নির্দেশনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আলুর দাম নিয়ে যে দুঃসংবাদ শোনালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ নিয়ে যা জানালেন আইনজীবী শিশির মনির নির্বাচন নিয়ে নতুন যে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সরকার নির্বাচন নিয়ে চাপ দিলে পদত্যাগ করবো: সিইসি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
  • সংস্কার অবশ্যই টেকসই হতে হবে, নিবর্তনের পুনরাবৃত্তি নয় : ফলকার তুর্ক

    নিজস্ব প্রতিবেদক

    ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

    সংস্কার অবশ্যই টেকসই হতে হবে, নিবর্তনের পুনরাবৃত্তি নয় : ফলকার তুর্ক

    জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক বুধবার জোর দিয়ে বলেছেন, গত কয়েক দশকে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পিত সংস্কার অবশ্যই টেকসই হতে হবে।

    তিনি বাংলাদেশে তার দুই দিনের সরকারি সফর শেষ করার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এবার, অবশ্যই ন্যায়বিচার হতে হবে। সংস্কার অবশ্যই টেকসই ও স্থায়ী হতে হবে, যাতে গত কয়েক দশকের নিবর্তনমূলক অনুশীলনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

    তুর্ক মৌলিক পরিবর্তনের জন্য দেশের বর্তমান সুযোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের পরিবর্তন মানবাধিকার সমুন্নত রেখে শাসন, উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে একটি নতুন পথ নির্ধারণ করতে পারে।

    তিনি বিভাজন, বৈষম্য ও দায়মুক্তি অবসানের লক্ষ্যে একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের জন্য সাম্প্রতিক সামাজিক আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত উচ্চ প্রত্যাশাগুলোর উল্লেখ করে বলেন, ‘বৈষম্য, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার চক্র, প্রান্তিকীকরণ, দুর্নীতি ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন অবশ্যই অতীতের বিষয় হওয়া উচিত।’

    এসব নজির ভাঙার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে হাইকমিশনার এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে তার দপ্তরের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সফল করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে।’

    তিনি মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে স্বাগত জানান।

    তুর্ক প্রধান উপদেষ্টার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকল প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনের গুরুত্ব উল্লেখ করেন।

    তিনি বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবিধানিক বিষয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের সুপারিশ করার লক্ষ্যে দ্রুত বিভিন্ন কমিশন গঠনের প্রশংসা করেন।

    তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রম অধিকার ও নারী বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য আরো কমিশন গঠন করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।

    তিনি বলেন, ‘আজকে বেশ কয়েকজন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় আমরা আস্থা-নির্মাণ, অন্তর্ভুক্তিকরণের গুরুত্ব এবং একই ধরনের সমস্যা-আক্রান্ত অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

    তিনি বলেন, এসব সংস্কার বাংলাদেশে কয়েক দশকের তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন কমিয়ে আনার এবং পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি পরিহারের জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হতে পারে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।

    তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই ও আগস্টে নিহত ও গুরুতর আহত বিক্ষোভকারী এবং শিশুসহ অন্য মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস সহিংসতার বিচারের প্রয়াস অগ্রাধিকার পেতে হবে।’

    ফলকার তুর্ক বাংলাদেশে সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সমাবেশের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানান।

    সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা হত্যাকাণ্ড ঘটতে দিতে পারি না।’

    তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সদস্য বা সমর্থকসহ কারো বিরুদ্ধে কেবল তাদের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা সমীচীন নয়।

    জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান সতর্ক করে বলেন, বহু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেসহ বেশ কিছু হত্যার অভিযোগ যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে না হওয়ার কারণে উদ্বেগ রয়েছে। ‘অতীতের দৃষ্টান্তের পুনরাবৃত্তি না করা গুরুত্বপূর্ণ।’

    ‘ব্যাপক সংখ্যায় মিথ্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি মোকাবিলা করার হাতিয়ার হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তুর্ক বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য।’

    তুর্ক বলেন, ফৌজদারি অপরাধের  বিচার করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাড়াহুড়া করে যাতে অভিযোগ আনা না হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)সহ সকল পর্যায়ে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায্য বিচারের মান বজায় রাখা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে অতীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়ার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন দেখতে পেয়েছি।’

    ভবিষ্যতে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ নিয়েও জনসমক্ষে আলোচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও প্রমাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট; মৃত্যুদণ্ড অতীতের বিষয় হওয়া উচিত।’

    তিনি বলেন, ছাত্ররা তাকে জানিয়েছেন যে তাদের উদ্বেগ শোনার জন্য দেশে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের কোনো বিকল্প ছিল না।

    তিনি বলেন, ‘সামাজিক সংহতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অব্যাহতভাবে সংকোচিত হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিসর পুনর্গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এ জন্য ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করে এমন নিবর্তনমূলক আইনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও সংস্কার প্রয়োজন।

    তিনি বলেন, কেবল পদ্ধতিগত পরিবর্তনই নিশ্চিত করবে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকারকে সম্মান করা হবে।

    তুর্ক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মতপ্রকাশের 'অপরাধে'র পুরানো মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।

    হাইকমিশনার বলেন, ‘একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি, যেখানে শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পরিচয় বা ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি কণ্ঠস্বর শোনা যাবে এবং মূল্যায়ন করা হবে, তা গ্রহণ মুখ্য হবে, যা এই রূপান্তর সূচনাকারী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ও বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটাবে।

    নারীরা জুলাই-আগস্ট মাসের বিক্ষোভসহ সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীদের অবশ্যই উত্তরণের সময় এবং এর পরেও তদের অগ্রভাগে থাকতে হবে।

    তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাঠামোতে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, সেইসাথে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ছাত্র এবং অন্যদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

    তুর্ক বলেন, যে কোনো দমন-পীড়ন, অভ্যুত্থান ও সহিংসতার পর এগিয়ে যাওয়ার জন্য সত্য প্রকাশ ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার একটি জাতীয় প্রক্রিয়া থাকা দরকার।

    ভুক্তভোগীদের তাদের প্রিয়জনদের এবং সমাজে বৃহত্তর সমাজের বেদনা এবং ক্ষোভের জন্য একটি ব্যাপক পদ্ধতির প্রয়োজন, যাতে অপরাধের ন্যায় বিচার, সত্য-সন্ধানী প্রক্রিয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ইতিহাসকে স্মরণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

    তুর্ক বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতি সনদের অনুমোদন এবং একটি তদন্ত কমিশন নিয়োগকে স্বাগত জানান।

    জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গত ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করছে।

    তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থাসহ এই ধরনের ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

    তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়াতে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি এবং ঘৃণামূলক প্রচারণার প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা গড়ে তুলতে হবে।

    অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনের শাসন নিয়ে উদ্বেগসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হয়েছে, তা স্বীকার করে তুর্ক সাম্প্রতিক ছাত্র বিক্ষোভের ফলে পরিবর্তনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

    তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি উপলব্ধি করার জন্য সাহস ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন হবে, তবে এটি আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং বদ্ধমূল বিভাজন নিরসনে সহায়তা করবে।’

    তিনি মানবাধিকারকে এসব পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা হিসাবে পরিচালনা করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

    তিনি বলেন, ‘আমি উৎসাহিত হয়েছি যে, আমার অনেক আলোচনায়, ‘জোরদার উপস্থিতির মাধ্যমে আমার দপ্তরের বর্ধিত সমর্থনের আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বাংলাদেশে আমাদের বর্ধিত উপস্থিতির পদ্ধতির ওপর আলোচনা শেষ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

    তিনি এ বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন মোতায়েন করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণকে অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন।

    দুই দিনের সফর শেষ করার আগে তুর্ক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।




    সাতদিনের সেরা খবর

    আন্তর্জাতিক - এর আরো খবর

    বাংলাদেশি শহীদুল আলমের ভাগ্যে যা ঘটলো!

    বাংলাদেশি শহীদুল আলমের ভাগ্যে যা ঘটলো!

    ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

    দখলদার ইসরায়েলের সাথে যে ১৫৮ কোম্পানি জড়িত

    দখলদার ইসরায়েলের সাথে যে ১৫৮ কোম্পানি জড়িত

    ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

    মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কে?

    মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কে?

    ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন