শিশুপুত্র রাসেল হত্যাকারীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করাও ছিল আরেক হত্যাসম অপরাধ বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘১০ বছরের একটি শিশুপুত্র পুলিশের সেন্ট্রিবক্সে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই শিশুটিকে খুঁজে এনে বাবা-মায়ের লাশ দেখিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কতটা উন্মত্ত হলে এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠতে পারে নরপশুরা। হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেলো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হলো। সেটি দেখেই বোঝা যায়, সেই হত্যাকাণ্ড কতটা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যখন মতাদর্শিক কারণে গণতন্ত্রের নামে সেই হত্যাকারীদের নিয়ে রাজনীতি করা হয়, ভেবে দেখুন আপনি সেই হত্যার অংশ কিনা।’
বুধবার (১৯অক্টোবর) গাজীপুর ক্যাম্পাসে সিনেট হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘মতের ভিন্নতা থাকবে। আমরা তো একটা গণতান্ত্রিক সমাজই তৈরি করতে চেয়েছি। সেকারণেই মতের ভিন্নতা থাকলে গণতন্ত্রের শক্তি বাড়ে। রাষ্ট্রের শক্তি বাড়ে। আমরা চাই অর্থনৈতিক কর্মসূচি, মতাদর্শ- সেসব জায়গায় ভিন্নতা থাকুক। এই ভিন্নতা একটি সৌন্দর্য তৈরি করে। সেটিই গণতন্ত্রের শক্তি। বঙ্গবন্ধু মূলত তার জীবনব্যাপী যে সংগ্রাম করেছেন, সেখানে গণতন্ত্রই ছিল তাঁর মূল ভাবনা। সেকারণেই ভিন্ন মতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা সবসময়ই থাকা উচিত, যারা আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলি। কিন্তু ভিন্ন মত, পথ আছে বলে আপনার কি কোনো অধিকার আছে যিনি এই জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করলেন তাঁকে, তাঁর সহধর্মিনীকে, তাঁর পুত্র, পুত্রবধূ, ১০ বছরের শিশু পুত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করার? নাকি মতের ভিন্নতা মূলত বাংলাদেশের বিরোধিতা, একাত্তরে যারা বাংলাদেশ চাননি তাদের সমর্থন জানানো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের পর সৃষ্টি হলো বাংলাদেশ। এরপরও আপনাদের মনের মধ্যে সেই রাজাকারের ভুত রয়ে গেছে। এথেকে অবশ্যই মুক্তি লাভ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধুর চেতনায় তৈরি করে মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।