ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রথমবারের মতো গবেষণা ও প্রকাশন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দুই দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে। দুই দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে রবিবার। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, গবেষণাকেন্দ্র ও বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান শতাধিক স্টল ও প্যাভিলিয়নে তাদের উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রকাশনা তুলে ধরছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় গবেষণা চান। কেননা তিনি নিজেও একজন বিজ্ঞানীর স্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গবেষণা করেছে সেগুলো কাজে লাগিয়ে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এভাবেই সব গবেষণা আমরা কাজে লাগিয়ে থাকি।
খাতভিত্তিক গবেষণার অভাব রয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি আরও বলেন, আজ আমরা রফতানি বহুমুখী করার কথা বলছি। কিন্তু রফতানির বড় সেক্টর গার্মেন্টসের তুলা আমরা উৎপাদন করতে পারি না, আমদানি করতে হয়। চামড়ার একটি বিশাল বাজার রয়েছে। গবেষণার জন্য নতুন আঁখ হচ্ছে না। ১৭টি সুগারমিল থাকা সত্ত্বেও নতুনত্ব না আনায় প্রাইভেট উদ্যোক্তাগুলো বাজার নিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছি। সেখানেও গবেষণা দরকার। এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী মানবসম্পদ তৈরিতে বিশ্ববিদ্যায়গুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আজ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসন্ন। সেখানে আমাদের যে কর্মীবাহিনী আছে, তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে কিনা সেটা ভাবতে হচ্ছে। আমাদের সুদক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, বাজেট গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ, অ্যালাইমনাইদের ভূমিকা রাখার জোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, অ্যাকাডেমিক লক্ষ্য অর্জনে অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তার সঙ্গে অবকাঠামো সংযুক্ত থাকবে। গবেষণার সর্বোচ্চ বরাদ্দ হওয়ার বিষয়ে আমরা একমত। তবে শুধু সরকারি বরাদ্দে সম্ভব নয়। বিদেশে পাবলিক প্রাইভেট পাটনারশিপ রয়েছে। আমাদের দেশে শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তিতে প্রাইভেট সেক্টরের বিরাট প্রভাব রয়েছে। অ্যালাইমনাইরা এখানে পড়ে অনেকে সমৃদ্ধ, অর্থশালী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের একটি স্পেশাল সমন্বিত গবেষণা ফান্ড থাকা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতি নীতিতে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া সম্পর্ক, কমিউনিটি অ্যাঙ্গেজমেন্ট, এলায়েন্স, কোলাবোরেশন মারাত্মকভাবে অনুপস্থিত। বিষয়টি চিহ্নিত করে আমরা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ, অ্যাকাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্কে জোর দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির পাশাপাশি বিতরণেরও উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বিপুল সংখ্যক মৌলিক গ্রন্থ, জার্নাল, গবেষণা প্রকাশনা রয়েছে এবং চলমান রয়েছে। সেখানে কমিউনিটির সম্পৃক্ততা জরুরি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।