দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক শিফটে চালানোর পরিকল্পনা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী জানুয়ারি থেকেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এর বড় অংশই দুই শিফটে চলে।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের সংখ্যা বিবেচনা করে দেশের সব বিদ্যালয়কে এক শিফটে আনার পরিকল্পনা করেছি। এ ব্যাপারে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অবকাঠামোগত বিবেচনা করে বিদ্যালয়গুলো সমন্বয়ও করা হবে। এ বিষয়ে সচিব বলেন, এখন দুই কক্ষের বিদ্যালয়ও আছে, এক কক্ষের বিদ্যালয়ও আছে, আবার তিন কক্ষের বিদ্যালয়ও আছে। দুই কক্ষে কোনোভাবেই ছয়টি ক্লাস চালানো সম্ভব নয়। আবার রাতারাতি ভবনও নির্মাণ করা যাবে না। এসব বিবেচনা করে দেশের সব বিদ্যালয়কে এক শিফটে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে কোনো বিদ্যালয় বন্ধ হচ্ছে না, কোনো শিক্ষকও চাকরি হারাচ্ছেন না। সবই ঠিক থাকছে। কেবল কাজটি ভাগ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এমনও দেখা যেতে পারে, যেখানে দুই কক্ষ আছে, সেখানে প্রাক্-প্রাথমিক থাকবে।
কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, আগামী জানুয়ারি থেকেই এটা করতে পারব। পুরোটা না পারলেও নিশ্চয়ই অনেকটা করতে পারব বলে আশা করছি।
সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সময় কখন থেকে কখন পর্যন্ত হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এখন মহানগর এলাকায় গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের জন্য একধরনের সময় আছে, আবার গ্রামের বিদ্যালয়ে একটু দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। এটি নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
তিনি বলেন, একেক জায়গার জন্য আমরা একেক ধরনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করব, যে কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজটি করব, কিন্তু কোথাও স্কুলসংখ্যা কম, এমনও গ্রাম আছে, যেখানে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র একটি স্কুল। তাতে দুটি কক্ষ আছে। সেখানে কক্ষ বাড়ানো ছাড়া কিছু করার সুযোগ নেই, যে কারণে আমরা বিভাগ অনুসারে, জেলা অনুসারে, উপজেলা অনুযায়ী, যেমন চরাঞ্চলে, হয়তো সেখানে ছাত্রসংখ্যা ৫০ জন, কিন্তু স্কুলটি রাখতে হচ্ছে। কারণ চরে তার পড়বার কোনো ব্যবস্থা নেই, যে কারণে বিষয়গুলো ঘটনা অনুসারে পর্যালোচনা করছি এবং নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা করছি। আগামী জানুয়ারি থেকেই আমরা এটি করতে পারব। পুরোটা করতে না পারলেও অনেকটা শেষ করব।
সব প্রাথমিক স্কুল এক শিফটে এলে ক্লাসের সময়সূচি কী হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ঢাকা কিংবা মহানগর এলাকার একটি সময় আছে, কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলোতে একটু দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। আবার স্কুলগুলো গ্রামে হলেও শিক্ষকেরা শহরে থাকেন, যে কারণে যাতায়াতের ব্যাপারটিও আমরা বিবেচনায় রাখছি, কিন্তু আমাদের লক্ষ হলো, শিক্ষকেরা ক্লাসে থাকছেন কি না, সেটির ওপর।
কারণ আমরা চাই, শিক্ষকেরা যাতে নিয়মিত পাঠদান করেন। আর টিচিং লার্নিং সময়টাও আমরা বাড়াতে চাই, যে কারণে আমরা এক শিফটে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। তিন ঘণ্টার জায়গায় আমরা সাড়ে চার ঘণ্টা/পাঁচ ঘণ্টা করতে চাই।
ঢাকার অনেক স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী আছে। সেখানে তাদের এক শিফটে নিয়ে এলে শিশুদের অন্য স্কুলে পাঠানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমাদের কোথাও কোথাও ঘটনা অনুসারে ভাবতে হবে। এই সংকটটা মহানগরীগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে। আবার আইডিয়াল স্কুলের পাশে সুন্দর অবকাঠামোসহ স্কুল আছে। সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। এতে সেখানে শিক্ষার মান বাড়ছে না। অথচ সেখানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকেরা আছেন। শিক্ষার্থীরা গেলে তো স্কুলটা কার্যকর হবে, যে কারণে আমরা চাই, আমাদের দেশের সব স্কুল সমমান সম্পন্ন হোক। যেমন কোনো স্কুল খুব সেলিব্রেটেড অবস্থায় আছে, আবার কোনো স্কুলে কেউ নেই। তা হতে পারে না। যেমন কাঁটাবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুদ্দিন স্কুল আছে। সেখানে সুন্দর অবকাঠামো আছে, শিক্ষকেরা খুবই দক্ষ, অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু সেখানে ছাত্রসংখ্যা কম। এখানে অভিভাবকদের একটি বড় ভূমিকা আছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে দিল্লি মডেলের কথা বলেছেন। আমাদের মৌলভীবাজারে দিল্লি মডেলের স্কুল আছে। সেখানে পৌর এলাকায় ১৪টি স্কুল আছে। এগুলো বাংলাদেশের সেরা। এতে বোঝা যায়, জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকেরা সম্পৃক্ত হলে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুবই মানসম্পন্ন হতে পারে, কিন্তু সবাই একটি জায়গা, একটি স্কুলকেই বেশি পছন্দ সেখানে যেতে চাচ্ছেন।
মতবিনিময়ের সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বিদায়ী সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রোববার ছিল তার শেষ কর্মদিবস। এ উপলক্ষেই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখানেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের কথা উঠে আসে।