করোনা মহামারীর প্রকোপে দেশের অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধার সরকারের এক বাজেটে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেন, করোনার ক্ষতি বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চোখে পড়ার মতো। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক কর্মকৌশল নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এই সম্মেলনের প্লেনারি সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সম্মেলনের প্লেনারি অধিবেশন কভিড-১৯ থেকে শোভন সমাজ—এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল বারকাত।
অর্থনীতি সমিতির এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য মহামারি কভিড-১৯-এর প্রভাব অভিঘাত ও মানব উন্নয়ন। মূলত মুজিববর্ষ এবং ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
লকডাউনের ৬৬ দিনের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে আবুল বারকাত বলেন, লকডাউনের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি নেমে এসেছিল ৩৫ শতাংশে। এ সময় সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে আমাদের দেশজ উৎপাদন খাতে (জিডিপিতে)। তা আমাদের প্রত্যাশিত জিডিপির প্রায় ৬৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে আবুল বারকাত বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেবা খাত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। শতাংশের হারে তা ৫৮ শতাংশ। এর পরে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিল্প খাতে; ৩৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে, প্রায় ৯ শতাংশ। যদিও সরকারের তেমন কোনো নজর নেই কৃষি খাতে।
তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার এখন পর্যন্ত যে নীতি কৌশল নিয়েছে তা কিছুটা দায়সারা। সরকারের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা হতে হবে কৃষি ও পরিবেশবান্ধব।
সমাধান হিসেবে করোনার প্রকোপ থেকে টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য সামাজিক বৈষম্য কমানোর তাগিদ দিয়ে আবুল বারকাত বলেন, করোনায় দরিদ্র মুখ অনেক বেড়েছে। সে জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য কমানো। এই বৈষম্য না কমাতে পারলে সমাজ ভারসাম্য হারাবে এবং ক্রমান্বয়ে বৈষম্য আরো বাড়বে। তবে ঠিকমতো ভারসাম্য স্থাপন করতে পারলে শোভন সমাজ গঠন করা যাবে।
আবুল বারকাত বিপর্যয় থেকে উদ্ধার ও শোভন সমাজের পথে এগোনোর লক্ষ্যে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবাহ ও সম্পদ বিবেচনায় নিয়ে সরকারের চারদিক থেকে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ব্যয় সংকোচন, ঋণ পুনর্গঠন, ধনী ও সম্পদশালীদের সম্পদের একটা অংশ দরিদ্রদের মধ্যে পুনর্বণ্টন এবং প্রয়োজনে টাকা ছাপানো। তবে মাথায় রাখতে হবে, জনগণের অভিপ্রায়ের বিপক্ষে কোনো কিছু করা যাবে না।
প্লেনারি সভাপতির বক্তব্যে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের উন্নয়ন করতে হবে। কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। ধনী, গরিব, জেলে, বেদে, এমনকি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ—কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ এবং সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ উপস্থিত।