কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা এলাকায় অবস্থিত মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একটি পেট্রোল পাম্পে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ নভেম্বর ভোরে ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে পাম্প কর্মীদের হাত-পা বেঁধে জিম্মি ও মারধর করে নগদ দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে লালমাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে গত তিন দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এর আগেও গত মাসে একই পদ্ধতিতে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর মালামাল ডাকাতি করে নেয়। এ বিষয় লালমাই থানায় SDR নং- ৯৮৩ তাং- ০৩/১০/২০২৩ইং দায়ের করা হয়, যা তদন্তাধীন রয়েছে।
এদিকে লালমাই উপজেলার বাগমারার বরলে অবস্থিত মেঘনা গ্রুপের সাতটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার জন্য ১০ জন আনসার ও একজন ইনচার্জ ‘অন পেমেন্ট বেসিসে’ প্রাথমিকভাবে ছয় মাস দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৬ নভেম্বর মেঘনা গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু তাহের এই আবেদন করেন।
পেট্রোল পাম্পে ডাকাতির বিষয়ে লালমাই থানায় দায়ের করা অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির উপ-মহাব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ রিপন বলেন, ৬ নভেম্বর ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪ টায় “প্রাইম পেট্রোলিয়াম সার্ভিসেস লিঃ”-এ নাম্বার বিহীন হলুদ কালার এর একটি মিনি ট্রাক আসে। তখন পেট্রোল পাম্পের অফিসের ভিতরে তিনজন উপস্থিত ছিল। পেট্রোল পাম্পের সামনে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ীর ড্রাইভারকে অকটেন ও ডিজেল নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ড্রাইভার ডিজেল নিবে বলায় গাড়ী ডিজেল মেশিনের পাশে রাখার জন্য বলে। গাড়ীর ড্রাইভার ডিজেলের মেশিনের পাশে গাড়ী নেয়ার পর গাড়ীর ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রায় ৪ থেকে ৫ জন ডাকাত গাড়ী থেকে নিচে নেমে আসে। তাদের আনুমানিক বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। দুষ্কৃতিকারীরা দক্ষিণ দিক থেকে এসে পেট্রোল পাম্পে প্রবেশ করে এবং চলে যাওয়ার সময় উত্তর দিকে যায়। তাদের পড়নে ছিল শার্ট, প্যান্ট এবং জ্যাকেট, মাথায় গামছা ও মুখে মাস্ক ছিল। প্রথমে দুষ্কৃতিকারীরা নিরাপত্তা কর্মীদেরকে ধরে পেট্রোল পাম্প অফিসের ভিতরের দিকে নিতে থাকে। অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র যেমন : রামদা, ছুরি, বড় কাটার, প্লান্স ও হকিস্টিক ছিল। পেট্রোল পাম্পের ভিতরে অবস্থান করা মোঃ রাসেল মিয়া দ্রুত বের হয়ে আসতে থাকে। এর মধ্যে তারা অফিসের ভিতরে ডুকে যায় এবং তিন জনকে লাথি, কিলঘুশি মেরে পেট্রোল পাম্পের ভিতরের রুমে নিয়ে যায়।

দুষ্কৃতিকারী অন্যান্য সদস্যরাও অফিসের ভিতরে ডুকে ড্রয়ার, আলমারী সহ সব কিছু ভাঙ্গা শুরু করে। দুষ্কৃতিকারীদের সাথে থাকা রশি দিয়ে পাম্পে উপস্থিত তিন জনের হাত-পা বেঁধে রাখে। পেট্রোল পাম্পে ড্রিয়ার ভেঙ্গে দিনের তৈল বিক্রির টাকা এবং মোঃ রাসেল মিয়ার পকেট থেকে রাত্রের তেল বিক্রির টাকা সহ এক লাখ ছয় হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে পেট্রোল পাম্পের উত্তর পাশে অবস্থিত দোতলা অফিসের সিঁড়ির রুমের কলাপসিবল গেটের তালা কেটে দোতলায় উঠে পূর্ব পাশের অফিসের দরজার সামনের কলাপসিবল গেটের তালা কেটে এবং কাঠের দরজার তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। মোট চারটি ষ্টিলের আলমারী ভেঙ্গে এর একটি ষ্টিলের আলমারির ভিতরের ড্রয়ার ভেঙ্গে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অক্টোবর /২৩ইং মাসের বেতনের (আংশিক) টাকা প্রায় এক লাখ ৯০হাজার টাকা ডাকাত দল নিয়ে যায় এবং আলমারিতে থাকা বিভিন্ন ফ্যাক্টরির স্পেয়ার পার্টস বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল। এর মধ্যে কোন মূলবান পার্টস ডাকাতি করে নিয়ে গেছে কিনা আমরা হিসাব নিকাশ করে দেখতেছি। ডাকাত দলের একটি অংশ মেঘনা কোল্ড ষ্টোরেজের দুটি তালা কেটে মেশিন রুমে ডুকে মেশিন রুমে ডিউটিরত দুই জনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে সেখানে বসিয়ে রাখে যাতে সামনের দিকে না আসে। পরবর্তীতে তারা ভোর ৫:১৫ মিনিটের সময় সামনে এসে পেট্রোল পাম্পের অফিসের ভিতরে লোকজনের আওয়াজ শুনে ভিতরে গিয়ে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদেরকে ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। মোট নগদ দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা ভয়ভীতি পূর্বক নিয়ে যাওয়ায় তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য থানা কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
তবে এখন পর্যন্ত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা হয়নি বলে পেট্রোল পাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মেঘনা গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য আনসার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর করা আবেদনের বিষয়টি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, র্যাব-১১ অধিনায়ক, লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান, লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ২ নম্বর বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও কপি দিয়ে জানানো হয়েছে।