সরাইলে তিতাস নদীতে উৎসবমুখর পরিবেশে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নদীর দুই পাশে ছিল দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়।
উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া-মলাইশ-গাজীপুর এলাকার যুবকরা এ আয়োজন করে।
নদীর বুড্ডা ঘাট থেকে মলাইশ নদীর ঘাট পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় পাঁচটি নৌকা অংশ নেয়। প্রায় দুই কিলোমিটার ওই নৌপথ ধরে হাজার হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
প্রতিযোগিতা শেষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন। তিনি লেখেন, ‘আজকে যখন প্রতিযোগিতার নৌকাগুলো নদীর বুকে সাজ সাজ রূপে দাঁড়িয়ে যায় দাঁড়িদের হাতে বৈঠা, গায়ে একরঙা পোশাক, আর গলায় সুর তোলা গান তখন মুহূর্তেই পরিবেশ রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে।
সেই গান, ‘সখি করি গো মানা, কালো জলে ঢেউ দিও না গো সখি কালো জলে ঢেউ দিও না।’
তিনি আরো লেখেন, ‘যেন সময়ের সীমানা ভেঙে অতীতকে বর্তমানের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। দাঁড়িদের ছন্দময় বৈঠা চালনা, দর্শকের উৎসাহ, আর ঢেউ খেলানো পানির শব্দ মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক অপূর্ব আবহ। নৌকা যখন গতি পায়, তখন দর্শকের কণ্ঠে একসঙ্গে ধ্বনি ওঠে উল্লাসে আকাশ-বাতাস কাঁপতে থাকে।
আমার মনে হচ্ছিল, আমি কোনো আধুনিক খেলার মাঠে নয়, বরং কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্যের ধারক সেই তিতাসের নৌকাবাইচে সময় ভ্রমণ করছি।’
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বাইচে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ক্ষমতাপুরের শাহবাজপুর বয়েজ ক্লাবের নৌকা বিজয়ী হয়। এ ছাড়া ফুল মিয়ার নৌকা দ্বিতীয় ও বাসু মিয়ার নৌকা তৃতীয় স্থান অর্জন করে। পুরস্কার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন দলকে একটি ফ্রিজ, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে টেলিভিশন ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের হাতে রাইছ কুকার তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী বাকি দুই নৌকার সংশ্লিষ্টদের হাতেও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
বাইচ শেষে মলাইশ বান্নী ঘাটে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সরাইলের ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নৌকাবাইচ কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি সামগ্রিক লোকোৎসব। এর প্রাচীনতা এতটাই সমৃদ্ধ যে তা ইতিহাসের দলিলেও খুঁজে পাওয়া যায়। নৌকাবাইচ আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। মানুষের ঢল, নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলা নৌকা, সুরের মূর্ছনা, ইতিহাসের আবহ সব মিলিয়ে মনে হয়েছে আমি যেন এক মহোৎসবের অংশ। সরাইলের নৌকা বাইচ শুধু নদীর জলে নয়, মানুষের হৃদয়ের ঢেউ তোলে, যা যুগ যুগ ধরে আমাদের সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।’