করোনা পরিস্থিতির নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০ টায় সারাদেশে একযোগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। সারা দেশে মোট ৩ হাজার ৬৭৯ কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ২৩ নভেম্বর এ পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হবে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আক্রান্তের হার সহনীয় মাত্রায় উন্নীত হওয়ায় পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিশেষ তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার সময় থাকবে দেড় ঘণ্টা। এ তিনটি বিষয়ের ফলের ওপর মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। সকালের পরীক্ষা ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা এবং দুপুরের পরীক্ষা দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রমতে, চলতি বছরে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন। মোট ৩ হাজার ৬৭৯ কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবারের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সারা দেশে ৯টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৯৯৮ জন।

অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ৭১০টি পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ৭৬০ পরীক্ষা কেন্দ্রে ভোকেশনাল পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন।

সূত্রমতে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। এ বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১ এবং কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

পরীক্ষার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে।

ব্যবহারিক পরীক্ষার বিষয়ে বলা হয়, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক খাতার নম্বর দিয়ে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে।

চলতি বছরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গ্রুপভিত্তিক বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে-ঢাকা বোর্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩১ জন, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ হাজার ২২৪, কুমিল্লা বোর্ডে ৫৪ হাজার ৫৮৩, যশোর বোর্ডে ৩৭ হাজার ৬০১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩১ হাজার ৫৭, বরিশাল বোর্ডে ২৫ হাজার ১১২, সিলেট বোর্ডে ২১ হাজার ৬২৩, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৯ হাজার ৩৬৫ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪১ হাজার ৮৩৫ জন।

মানবিক বিভাগে-ঢাকা বোর্ডে ২ লাখ ৯৫৭ জন, রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭২৫, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৯ হাজার ৩৬১, যশোর বোর্ডে ১ লাখ ১৭ হাজার ১০৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬৫ হাজার ১৫৭, বরিশাল বোর্ডে ৫৯ হাজার ৬৫৬, সিলেট বোর্ডে ৮৯ হাজার ৯৩৩, দিনাজপুর বোর্ডে ১ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭৭ হাজার ৪৮১ জন।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে-ঢাকা বোর্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১২ জন, রাজশাহী বোর্ডে ১১ হাজার ৬১৯, কুমিল্লা বোর্ডে ৮০ হাজার ৯৩০, যশোর বোর্ডে ২৬ হাজার ৫৭২, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬৪ হাজার ৭১১, বরিশাল বোর্ডে ২০ হাজার ২২২, সিলেট বোর্ডে ৯ হাজার ৫৫৫, দিনাজপুর বোর্ডে ৪ হাজার ৩৭৫ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ১১ হাজার ৩৮৬ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১ জন, মানবিকে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন।

২০২১ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে এনসিটিবির নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সাথে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর অনলাইনে বোর্ডে পাঠাবে।