ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি ভাইরাস। এতে দেশটিতে ৫৭ হাজারেরও বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভয়বহ অবস্থা রাজস্থানে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তরের এ রাজ্যটিতে সরকারি হিসাবে ৩৭ হাজারের মতো গরুর মৃত্যু হয়েছে চামড়াজনিত এ রোগে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
দেশটির কেন্দ্রীয় মত্স্য, পশুপালন ও দুগ্ধজাত মন্ত্রী পরশোত্তম খোদাভাই রুপালার বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া ডটকম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশসহ ৬-৭ রাজ্যে লম্পি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশেও কিছু জায়গায় এ রোগে গরু আক্রন্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিয়মিতই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে এবং রাজ্যগুলোকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পরশোত্তম খোদাভাই রুপালা খামারীদের গরুকে গোট পক্স ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । সেই সঙ্গে যেসব রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে টিকা দেয়ার গতি আরো বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুপালার মতে, গুজরাটে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় লাম্পি রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজস্থানে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে আগামী দুই মাসে ৪০ লাখ গরুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এছাড়া গুজরাটের ১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় পশু পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যগুলোকে মৃত গবাদি পশুকে নির্ধারিত নিয়ম মেনে মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
এদিকে রাজস্থানে গরু লালনপালনের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো জীবিকা সংকটে পড়েছে। লাম্পি ভাইরাসের কারণে দুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাজ্য পশুপালন দফতরের সচিব পিসি কিষাণ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট গবাদি পশুর মালিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠি লিখেছেন। পিসি কিষাণ আরো বলেন, বর্তমানে গোট পক্স ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
লাম্পি ভাইরাস সাধারণত মাছি, মশা ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়ায়। তাই যেসব রাজ্যে ভাইরাসটির তাণ্ডব বেশি, সেসব রাজ্যের সরকার বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃষ্টি কমে গেলে ভাইরাসটিকে বহন করা মশা ও মাছি কমে যাবে এবং লাম্পি নিয়ন্ত্রিত হবে।
এ রোগে আক্রান্ত প্রাণী বা গরুর শরীরে জ্বর দেখা দেয়, চোখ ও নাক থেকে তরল ঝরে, দুধ উত্পাদন কমে যায় এবং খেতে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়াও মুখ, ঘাড়, নাক ও চোখের পাতাসহ সারা দেহে গুটিতে ভরে যায়। সেই সঙ্গে পা ফোলা, খোঁড়া হয়ে যাওয়া, কাজ করার ক্ষমতাও কমে যায়। এমনকি গরু ও মহিষ প্রায়ই এ রোগের কারণে গর্ভপাতের শিকার হয়। তবে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমাল হেলথ (ডব্লিউওএএইচ) বলছে, রোগটি জুনোটিক নয়। ফলে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না।