আমার দুইটি হাতই নেই,তাতে কি হয়েছে? ভিক্ষা করে খাওয়া তো মোটেই ভাল নয়। তাই আমি চেষ্টা করেছি নিজে হালাল উপায়ে উপার্জন করে সংসার চালাতে। তাতে আমি সফল হয়েছি। যতদিন বাঁচবো ততদিনই আমি আল্লাহ রহমতে ও আপনার দোয়ায় নিজেই উপার্জন করে সংসার চালাবো। কথাগুলো বললেন দুই হাত না থাকা প্রতিবন্ধী আয়াতুল্লাহ খোমনী। তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের তেলকুপি গ্রামের আজমুল হকের ছেলে ।
তিনি জানান, ২০১০সালে হাজী কলমদার মাদ্রাসার চর্তুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া অবস্থায় মাত্র ১১বছর বয়সে বাড়ির পাশে মসজিদের কাজ চলার ভুল করে দুই হাত দিয়ে বিদ্যুতের তার ধরলে সংগে সংগে আমার দুই হাত পুড়ে যায়।এ সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু তিনদিন থাকার পরেও কোন চিকিতসা না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল ভর্তি হই। সেখানে চিকিতসাধীন অবস্থায় ১৭দিন পর দুই হাতই কেটে ফেলতে হয়। তখন থেকেই আমি প্রতিবন্ধী। বাড়ি ফিরে এসে প্রথমে সামান্য কিছু হরেক মাল নিয়ে বাড়ির সামনে টুলে বসে বেচাকেনা করতাম।গত বছর শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বর্তমানে কালাই উপজেলাতে )পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দিলে সে টাকা দিয়ে কিছুদিন জয়পুর হাট সহ বিভিন্ন জেলাতে হরেক মালের ব্যবসা করি। দুইমাস আগে বাড়ি ফিরে এসে আরো পাঁচ হাজার লোন করে মোট ১০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে প্রায় ১৫ কেজি ওজনের এক বক্স গলায় ঝুলিয়ে হরেক মালের ফেরী করছি। আমার বক্সে আতর, চিরনী আয়না,মানিব্যাগ,চাবির রিং সহ প্রায় ৫০ ধরনের হরেক মাল আছে। প্রতিদিন প্রায় আট শ টাকা বেচাকেনা হয়। লাভ হয় প্রায় দুই শ টাকা। তাই দিয়ে বাবা, মা, দুই বোন দুই ভাই , স্ত্রী, ও এক সন্তান নিয়ে আমাদের সংসার । বোন দুটির বিয়ে দিয়েছি। এক ভাইকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করাচ্ছি। অন্য ভাই ছোট। সহযোগিতা বলতে শুধু একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে। ইউপি চেয়ারম্যান - মেম্বার কোন দিন খোঁজ করেনি। আমার ইচ্ছে যদি একটি ভ্যান ও কিছু টাকা পেলে আমি আরো কিছু মালামাল কিনে নিজে ভ্যানগাড়ী চালিয়ে দূরদূরান্তে যেতে পারবো, ব্যবসা ভাল হবে। উপার্জনও বেশী হবে। তা দিয়ে ভাই দুটোকে ও আমার সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করতে পারবো।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:উজ্জল হোসেন বলেন, তার দুই হাত না থাকলে ভিক্ষা না করে কষ্ট করে নিজেই উপার্জন করে সংসার চালানোঅবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন বর্তমান জনবান্ধব সরকারের আমলে কোন কোন অসহায় ও দু:স্থদের অবহেলার করার সুযোগ নেই। আয়াতুল্লাহ খোমনীর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।