শিরোনাম
  • ফের যে আসন থেকে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক ফুটবলে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইসরায়েল কে এই নতুন মেসি-ইয়ামাল? ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে যা বললেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে যে নতুন নির্দেশনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আলুর দাম নিয়ে যে দুঃসংবাদ শোনালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ নিয়ে যা জানালেন আইনজীবী শিশির মনির নির্বাচন নিয়ে নতুন যে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সরকার নির্বাচন নিয়ে চাপ দিলে পদত্যাগ করবো: সিইসি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
  • সাব-রেজিষ্ট্রারের যোগসাজশের অভিযোগ

    ভোলার উকিল পাড়া মসজিদের ওয়াকফের সম্পত্তি আত্মসাত

    জাগো কণ্ঠ ডেস্ক

    ৭ জুলাই, ২০২৪ ০৮:০০ পূর্বাহ্ন

    ভোলার উকিল পাড়া মসজিদের ওয়াকফের সম্পত্তি আত্মসাত

    সাব-রেজিষ্ট্রারের যোগসাজশে ভোলা সদরের উকিল পাড়া মসজিদের কোটি টাকার ওয়াকফের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ওয়াকিফের দেয়া সম্পত্তি বিক্রির শর্ত ভঙ্গ, ওয়ারিশদের সাথে প্রতারণা, ওয়াকফ প্রশাসকের দেয়া জমি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, এমনকি ২০১৩ সালের জারিকৃত সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোলা সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউনুসের যোগসাজশে ২০২৪ সালে মাত্র ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ভোলা সদর উপজেলার পৌরসভাধীন উকিল পাড়া মসজিদের ১৭ শতাংশ ওয়াকফকৃত সম্পত্তি যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকারও বেশি।


    নারী মোতাওয়াল্লী হাচিনা বেগম এবং এবং যুগ্ম মোতাওয়াল্লী কামরুল হাসান মামুন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই সম্পত্তি বিক্রি করেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এবং একই সাথে বেরিয়ে আসে তাদের অতীতের করা অনেক ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং সেগুলো ধামাচাপা দেয়ার ইতিহাস।


    ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী প্রাচীন উকিল পাড়া মসজিদটি মূলত হাচন আলী মুন্সী উকিল নামে এক দানবীর ব্যক্তির ওয়াকফ করা অঢেল ভূ-সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় ১৯১২ সালে হাচন আলী মুন্সী উকিল এই মসজিদটির জন্য বিপুল ভূ-সম্পত্তি ওয়াকফ করার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং তার মৃত্যুর পর ২১ জুন ১৯৩৫ ইং সালে ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তার স্ত্রী খাইরুন্নেছা বিবি সম্পত্তিটিকে ১৯৩৪ সালের আইন অনুযায়ী ওয়াকফকে তালিকাভূক্ত করেন, যেখানে সেই ওয়াকফকৃত সম্পত্তিটিকে ওয়াকিফের ইচ্ছানুযায়ী মুলত ধর্মকাজে এবং ওয়ারিশদের জন্য ব্যবহার করা যাবে মর্মে ওয়াকফ করা হয়।


    যে ওয়াকফনামায় তিনি ওয়াকিফের শর্ত হিসেবে অন্যান্য শর্তের সাথে পুরুষ ছাড়া অন্য কাউকে মোতাওয়াল্লী না করার এবং মোতাওয়াল্লীগণকে স্থায়ীভাবে সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে কালক্রমে ওয়াকিফের দেয়া শর্ত একের পর এক ভঙ্গ করে নারী মোতাওয়াল্লী নিয়োগ করা হয় এবং হাচিনা বেগম নামে উক্ত নারী মোতাওয়াল্লী ও কামরুল হাসান মামুন নামে একজন পুরুষ মোতাওয়াল্লী ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন সময়ে কর্মরত অসাধু সাব-রেজিষ্ট্রারদের সাথে যোগসাজশে মসজিদটির কোটি কোটির টাকার সম্পত্তি বিভিন্ন সময়ে বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ অন্যান্য ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে মসজিদ কমিটিকে না জানিয়েই অবৈধভাবে আত্মসাত করেন।


    বিগত ০৭/১২/২০২১ইং তারিখে বরিশাল জেলা ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে দেয়া এক তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া সেই দুই মোতাওয়াল্লীর বিভিন্ন অপকর্মের বিশদ বিবরণ যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়।


    প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, মোতাওয়াল্লীদ্বয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ০২/০৩/১৯৯৬ ইং তারিখে প্রাপ্ত একটি বিক্রয় অনুমতি নিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জমি ওই সময়েই বিক্রি করে দেন। তাদের এই অবৈধ কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে জমি বিক্রির অনুমতি নেয়ার একবছর পরই অর্থাৎ ৩০/০৪/১৯৯৭ইং তারিখে ওয়াকফ প্রশাসক বরি/ইসি নং-২৫৪৮ স্মারকের পত্রে ওয়াকফের জমি বিক্রিতে যে অনুমতি দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করেন।


    তবে এই নিষেধাজ্ঞা পত্রটির তথ্য গোপন এবং সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে উক্ত পত্র জারির পরও বিভিন্ন সময়ে বেআইনীভাবে ওয়াকফের বিপুল সম্পত্তি বিক্রি করে দেয় এই চক্রটি। শুধু এখানেই ক্ষান্ত হননি তারা। এমনকি ২০১৩ সালের প্রণীত ওয়াকফ সম্পত্তির হস্তান্তর ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে চক্রটি।
     
    সময়ের কালক্রমে বয়োবৃদ্ধ নারী মোতাওয়াল্লী হাচিনা বেগম বর্তমানে শয্যাশায়ী। রোগাক্রান্ত এবং বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে তিনি এখন স্মৃতিভ্রষ্ট এবং কোন কাগজপত্রে সাক্ষর করতে বা ওয়াকফ ষ্টেট পরিচালনায় সক্ষম নন। তবুও ২০২৪ সালেও হাচিনা বেগমের ছেলে এবং আরেক মোতাওয়াল্লী কামরুল হাসান মামুন পুর্বের ধারাবাহিকতায় ওয়াকফের সম্পত্তি এ বেহাত করে চলছেন। তার সাথে যোগ দিয়েছেন উপজেলা ভূমি অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ ইউনুস।


    ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী ওয়াকফ সম্পত্তির হস্তান্তর ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হয় যে আইনটি ওয়াকফ (সম্পত্তির হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১৩ নামে পরিচিত। এই আইনের প্রাধান্যের অংশে বলা হয়েছে যে ‘আপাতত: বলবৎ অন্য কোন আইন, বিধি, প্রবিধান, ওয়াকফ দলিল বা চুক্তিপত্রে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রধান্য পাইবে। অর্থাৎ আগে কোন অনুমতি নেয়া থাকলেও এই আইনের মাধ্যমে সেটিকে রহিত করা হয় এবং এই আইনে কোথাও ওয়াকফে লিল্লাহ বা ওয়াকফে আওলাদ বলে কোন বিষয় না রেখে বরং পুরো বিষয়টিকে একটি আইনের আওতায় আনা হয়।


    এই আইনে যে কোন ধরণের ওয়াকফের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হলে আইনগতভাবে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে এবং সেই কমিটির কমপক্ষে ৯ (নয়) জন সদস্যকে কোন সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য একমত হতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সেই কমিটিতে যাদের থাকতে হবে বলে আইনে উল্লেখ আছে তারা হলেন (১) ওয়াকফ প্রশাসক (২) সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলীয়া, ঢাকা এর অধ্যক্ষ বা তার মনোনীত কোন অধ্যাপক (৩) গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক মনোনীত নির্বাহী প্রকৌশলী (৪) মহাপরিদর্শক নিবন্ধন কিংবা মনোনীত প্রতিনিধি (৫) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব মর্যাদার দুই জন (৬) আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উপসচিব মর্যাদার একজন (৭) সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন (৮) ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন (৯) ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত ফাউন্ডেশনের একজন মুফতি (১০) উপ-ধারা ২ অনুযায়ী নির্বাচিত ০৩ (তিন) জন মোতাওয়াল্লী। 


    মুলত ওয়াকফের সম্পত্তি খুব সহজেই যাতে অসাধু মোতাওয়াল্লীরা আত্মসাত করতে না পারেন তাই এ ধরণের একটি শক্ত কমিটির তৈরির জন্য আইন তৈরি করা হয় বলে ভোলার একজন আইনজীবি তার মতামত ব্যক্ত করেন।


    ওয়াকিফের দেয়া বিক্রির শর্ত ভঙ্গ, অবৈধ নারী মোতাওয়াল্লী, ওয়াকফ প্রশাসকের দেয়া জমি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা অমান্য এমনকি সরকারী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ২০২৪ সালেও কামরুল হাসান মামুন ও হাচিনা বেগম সেই সাথে ভোলা সদর সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ ইউনুস এর যোগসাজশে বিক্রি করে দেয়া ১৭ শতাংশ জমির একটি দলিলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

     
    সেই দলিলের নকল কপি এবং নামজারীর তথ্য হতে জানা যায় যে, ২২/০১/২০২৪ইং তারিখে  ৫৫৭ নং দলিলে উকিল পাড়া মসজিদের ওয়াকফের সম্পত্তি হতে ভোলা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের অধীনে থাকা ১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়া হয়, যার খতিয়ান নং ২৯৭৯। যেখানে কাগজে-কলমে ৩৮ লক্ষ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত পক্ষে মাত্র ৫ লাখ টাকায় উক্ত জমি বিক্রি করা হয়। যদিও বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে ওই জমিটির মূল্য কমপক্ষে দুইকোটি টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পরবর্তীতে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ১৫/০২/২০২৪ইং তারিখে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আলী সুজার সাক্ষরে কোন প্রকার যাচাই-বাছাই এবং তদন্ত ছাড়াই উক্ত ওয়াকফের ১৭ শতাংশের জমিটির নামজারিও সম্পন্ন করা হয়।

     
    অভিযোগের বিষয় নিয়ে বর্তমান মোতাওয়াল্লী কামরুল হাসান মামুনের সাথে ক্রেতা সেজে এক সাংবাদিক  যোগাযোগ করলে তিনি আরো সম্পত্তি বিক্রির জন্য রাজি হন। পরবর্তীতে পরিচয় জানার পর তিনি ওই সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। নারী মোতাওয়াল্লী বয়োবৃদ্ধ  হাচিনা বেগম বর্তমানে গুরুত্বর  অসুস্থ, কর্ম অক্ষম এবং স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলে বিষয়টিকে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে ফেলার মত অনৈতিক প্রস্তাব দেন। 

     

    এছাড়া উকিল পাড়া মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ট্রুম্যানও উক্ত মোতাওয়াল্লীদের অবৈধ কর্মকান্ডের নিন্দা জানান এবং দোষীদের শাস্তি দাবী করেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার ইউনুচ আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং প্রশ্নের মুখে কোন প্রকার উত্তর না দিয়েই তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করেন।


    উল্লেখ্য যে, ওয়াকিফের শর্ত অনুযায়ী নারী মোতাওয়াল্লী না থাকা এবং তার কর্ম অক্ষমতা, ও যুগ্ম মোতাওয়াল্লী কামরুল হাসান মামুনের অবৈধ কর্মকান্ডের কারণে মৃতপ্রায় ওয়াকফ এস্টেটটিকে রক্ষার লক্ষ্যে আগের একজন মোতাওয়াল্লী মৃত মোজাম্মেল হক এর ছেলে এবং উক্ত ওয়াকফ ষ্টেটের একজন বৈধ ওয়ারিশ নুরুল হক ঝিনুকের করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান যুগ্ম মোতাওয়াল্লী কামরুল হাসান মামুন এবং হাচিনা বেগমকে অপসারণের জন্য বিগত ০৭/১২/২১ইং তারিখে বরিশাল ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয়ের ওয়াকফ পরিদর্শক মো: লুৎফর রহমান সাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। 

    তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়টির সুরাহা না হওয়ার কারণে দিনকে দিন উক্ত মোতাওয়াল্লীদ্বয় বেপরোয়ো হয়ে উঠছেন এবং মসজিদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে হাচন আলী মুন্সী ওয়াকফ এস্টেটটিকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাড় করিয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করে, দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল। (সূত্র: ডিবিসি নিউজ)।




    সাতদিনের সেরা খবর

    সারাদেশ - এর আরো খবর

    যে কারণে ৭ দিন বন্ধ সোনাহাট স্থলবন্দর!

    যে কারণে ৭ দিন বন্ধ সোনাহাট স্থলবন্দর!

    ৭ জুলাই, ২০২৪ ০৮:০০ পূর্বাহ্ন