গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে দূবৃত্তের হাতে হত্যার শিকার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের খাসেরহাট এলাকায় আব্দুল্লাহর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকে মুহ্যমান আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বিধবার মা তাসেনুর বেগম জানান, আমার পঙ্গু ছেলে কি এমন কি করেছিল যে তাকে দূবৃত্তরা এভাবে পিটিয়ে হত্যা করল। তাকে মৃত্যুর সময় এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত পান করতে দিল না। শুধু তাই নয়। আমার মৃত সন্তানকে টেনে হেঁচড়ে এক থানা থেকে অন্য থানা টেনে নিয়ে গেছে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন এর সঠিক বিচার করে। সোমবার দুপুরে সরজমিনে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বাড়িতে তার মায়ের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের । তিনি আরো জানানা, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এখন আমরা নি:শ।
এ সময় তিনি বার বার জ্ঞান হারাছিলেন। তার স্ত্রী বিউটিয়ারা বেগম জানান,বাসায় মাত্র তিন দিনের কন্যা সন্তান ও আমার জন্য ওষধ কিনতে বিনোপুর বাজারে গেলে একদল দূবৃত্ত আমার স্বামীকে তিন দফায় এলোপাতাড়ী পিটিয়ে হত্যা করে। আমি রাত সাড়ে ১১াটার দিকে জানতে পারি। তখন আমি বাসায় একা ছিলাম।বর্তমানে আমি দিশে হারা। মাত্র তিনদিনের কন্যা সন্তান নিয়ে স্বামী হারিয়ে বিধবা হলাম। আমার স্বামী তার মৃত্যুর আগে বাড়িতে কিছুই রেখে যেতে পারেনি। তবে আমি যদি কোন কর্মস্থান পাই তবে সন্তানটিকে মানুষ করবো। তাই আমি সরাকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, আমাকে অনেকেই ফোন করছেন। তবে পরিচয় দিচ্ছে না। শুধু বলছেন আপনি অনুমতি দিলে আমরা দেখা করবো। দলীয় কোন নেতা কর্মী বা প্রশাসনিক কোন কর্মকর্তা দেখা করেননি বা কোন খোঁজ খবর নেননি। বিধবা বিউটিয়ারা বেগম জানান, আমার স্বামী অনেক দিন থেকে কোন দলের রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত ছিল না। তার শারীরিক অবস্থাও ভাল ছিল না। কার কাছে বিচার চাইবো বুঝতে পারছি না। তবে আমার ভাসুর আয়াতুল্লাহ বেহশতী অভিভাবক হিসাবে যদি মনে করেন আইনের আশ্রয় নিবে । তবে আমার কোন আপত্তি নেই।
আব্দুল্লাহ বড় ভাই আয়াতুল্লাহ বেহশতী বলেন ২০১৪সালে রা.বি.তে লেখাপড়া করার সময় রা.বি শাখার ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ২৯ এপ্রিল সকাল আটটার দিকে ক্লাশে যাবার সময় একদল দূবৃত্ত আমার ছোট ভাইকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে গুরুতর জখম করে। এতে তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বাম পা আংশিক ছিল।তাছাড়া দুই হাতে ও শরীরে অসংখ্যা আঘাত থাকায় তখন থেকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ পঙ্গুত্ব বরণ করে। কোন রকমে চলাফেরা করতো। এরকম করুন পরিস্থিতির মধ্যে আব্দুল্লাহ আম মাসুদ সাম্প্রতিক কালে নিজের দূর্দশার কথা জানিয়ে সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি লিখেন । ২০২২সালে ৬ ডিসেম্বর প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তায়েফা সিদ্দিকী. রা.বি.র ভিসির নিকট পাঠানো চিঠিতে রা.বি.র সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আম মাসুদকে নিয়োগ দানের নির্দেশ দিলে ওই বছরই ২০ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আম মাসুদকে রা.বি.র মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেন এবং ২২ডিসেম্বর যোগদান করেন। আয়াতুল্লাহ বেহশতী আরো বলেন আমার ভাই পঙ্গুত্ব বরণের পর কোন ধরনের রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত ছিল না। চাকুরী করা অবস্থায় গত ২০২৩ খ্রী: ১১এপ্রিল মোবারকপুর ইউনিয়নের চাতরা এলাকায় বিউটিয়ারা সাথে আব্দুল্লাহ আম মাসুদের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর গত ৫ সেপ্টম্বর হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। সেই কন্যা সন্তান ও তার মায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে ওষধ কেনার জন্য বাসা থেকে বিনোদপুর বাজার গেলে দূবৃত্তরা তাকে তিন দফা পিটিয়ে এক থানা থেকে আরেক থানা টানা হেঁচড়া করে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, আমার ভাই ২০১৪ সালে পঙ্গুত্ব বরণ করারা পর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো না। বর্তমানে পরিস্থিতে কোন মামলা করতে পারছি না। কারণ বর্তমানে আমি রাজশাহী যেতে পারছি না। আমি পরিবারের ৪ জন সদস্য নিয়ে অত্যন্ত আতংকের মধ্যে আছি। তবে আল্লাহর কাছে বিচার দাবী করছি। এলাকার বিশিষ্ট লেখক ওহেদুল হক শিপু, বেকার যুবক অসীম কামাল,নাদিম পারভেজ ও মাহবুবুল হাসান লিটন সহ অনেকেই এ নির্মম হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করেন এবং অসহায় পরিবারের জন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ পঙ্গুত্ব বরণের পর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না । উল্লেখ্য যে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত একটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আব্দুল্লাহ আম মাসুদ মারা যায়। তারা আগে অসুস্থ স্ত্রী ও তিন দিনের কন্যা সন্তানের জন্য রা.বি.র জুবেরী ভরনের তার বাসা থেকে পাশবর্তী বিনোদপুর বাজারে ওষধ কিনতে গেলে দূবৃত্তরা তাকে আটকে তিন দফায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করে রাজশাহীর দুই থানায় টানা হেঁচড়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই মারা যায়।