রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফারুক সরদার (২৫) নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লী চিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় নিহত ফারুকের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ সহ ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে রবিবার একটি মামলা দায়ের করেন। সোমবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত ও এজাহার নামীয় আসামী ফজল ও ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মোবাইল ফোনে বাকবিতন্ডার জের ধরে উত্তেজিত হয়ে ফারুক হোসেন ও অপর যুবক আলামিন শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৯ টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর আলেয়া বাড়ীওয়ালীর গেটের সামনে আসে। এসময় অপর পক্ষ তাদের উপর হামলা চালিয়ে ফারুক হোসেন ও আলামিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে হামলা, লুটপাট, মারধর করাসহ মাদক, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলে আসছে। পুজা উপলক্ষে মেলার জুয়া ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারুক ও রিপনের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ দ্বন্দ্বের জেরে দুদিন আগে দুগ্রুপের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে ফারুক লোকজন নিয়ে রিপনের দোকানে গেলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রিপনের লোকজন। নিহত ফারুকের ভাই মনিরুজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা শুরুর দিন থেকে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের পাশে মেলা বসেছে। ওই মেলায় জুয়ার আসর বসায় রিপন ও তার লোকজন। মেলার বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতিদিন তারা চাঁদাও তুলে আসছিল। তাদের জুয়ার আসর বসানো ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করছিল ফারুক। তিনি বলেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে রিপনের মুদি দোকানে গিয়ে আবারও তাকে চাঁদাবাজি ও জুয়ার আসর বন্ধ করতে বলে। এতে রিপন ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, দুই পা ও বাম হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় ৪নং আসামী ফজল ও তদন্তে প্রাপ্ত ইউসুফ নামে ২ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।